গ্যাস লিকেজ 'বোমার মত' বিপজ্জনক, নিরাপদ থাকার উপায় কী?
বাংলাদেশের ঘরে ঘরে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে রান্নাবান্নার জন্য গ্যাসের ব্যবহার বহুদিন ধরেই প্রচলিত। কিন্তু এই নিত্য প্রয়োজনীয় গ্যাস এখন বিরাট...
বাংলাদেশের ঘরে
ঘরে, বিশেষ
করে শহরাঞ্চলে
রান্নাবান্নার জন্য
গ্যাসের ব্যবহার
বহুদিন ধরেই
প্রচলিত। কিন্তু
এই নিত্য
প্রয়োজনীয় গ্যাস
এখন বিরাট
দুশ্চিন্তার কারণ
হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে
ঢাকায় পরপর
দুইটি ভবনে
বিস্ফোরণের পর
বাসাবাড়িতে গ্যাস
জমে থাকার
বিষয় নিয়ে
আলোচনা শুরু
হয়েছে।
অনেকে মনে
করছেন, লাইনগুলোর
রক্ষণাবেক্ষণে অসচেতনতা
ও অব্যবস্থাপনার
কারণেই গ্যাস
জমে বিস্ফোরণের
ঘটনাগুলো ঘটেছে।
এর ফলে,
বাসাবাড়িতে নিজেদের
নিরাপত্তা নিয়ে
সংশয়ে ভুগছেন
অনেকেই।
বিশ্লেষকরা মনে
করছেন গ্যাসের
উৎস চিহ্নিত
করে নিয়মিত
তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে
এ ধরনের
দুর্ঘটনা এড়ানো
সম্ভব।
এখন প্রশ্ন
হচ্ছে, গ্যাস
জমছে কীভাবে,
এবং তা
থেকে পরিত্রাণের
উপায়ই বা
কী?
গ্যাসের উৎস
বাসাবাড়িতে নিয়মিত
ব্যবহার করা
গ্যাসগুলোর মধ্যে
থাকে প্রাকৃতিক
গ্যাস ও
লিকুইড পেট্রোলিয়াম
গ্যাস বা
এলপিজি, যা
অনেকের কাছে
সিলিন্ডার গ্যাস
হিসেবেও পরিচিত।
প্রাকৃতিক গ্যাসের
পাইপ বা
এলপিজির সিলিন্ডারে
ছিদ্র বা
‘লিকেজ’ হয়ে
গ্যাস জমতে
পারে।
একই সঙ্গে
বাসাবাড়িতে ব্যবহার
করা রেফ্রিজারেটর
ও এয়ারকন্ডিশনার
থেকে গ্যাস
রিলিজ হবার
সম্ভাবনা থাকে।
বাসাবাড়িতে গ্যাস
জমে বিস্ফোরণ
ঘটাতে পারে
এমন আরেকটি
উৎস পয়নিষ্কাশন
লাইন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল
বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)
কেমিকৌশল বিভাগের
সহযোগী অধ্যাপক
ড. মোহাম্মদ
ইকবাল হোসেন
বলেন, গবাদি
পশুর বর্জ্য
দিয়ে বায়োগ্যাস
তৈরি করাসহ
যেমন এর
বহুমাত্রিক ব্যবহার
আছে, তেমনি
মানুষের বর্জ্যে
সেপটিক ট্যাংকে
গ্যাস জমা
হবার সুযোগ
আছে।
ইউটিলিটি লাইন
ও অব্যবহৃত
পাইপলাইনেও গ্যাস
জমে থাকতে
পারে।
আবদ্ধ জায়গায় গ্যাস
অনেক সময়
গ্যাস সংযোগ
বিচ্ছিন্ন করে
দেয়ার পরও
বদ্ধ পাইপলাইন
ভবনে থেকে
গেলে, তাতে
গ্যাস জমে
থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
যত ধরণের
বিস্ফোরণ ঘটে
তার মধ্যে
অন্যতম একটি
কারণ হচ্ছে
আবদ্ধ জায়গায়
গ্যাস জমে
থাকা।
এছাড়াও পারফিউমসহ
প্রসাধনী সামগ্রীতেও
রাসায়নিক থাকে,
যাতে গ্যাস
জমা হবার
সুযোগ থাকে।
তবে বাসাবাড়িতে
থাকা এসব
প্রসাধনীর পরিমাণ
অত্যন্ত কম
হওয়ায় তা
খুব বেশি
ঝুঁকিপূর্ণ নয়
বলে মন্তব্য
করেন ড.
হোসেন।
কীভাবে বুঝবেন ‘লিকেজ’ হচ্ছে?
গন্ধ ও
শব্দ, এই
দুই পদ্ধতিতে
খুব সহজেই
কোথাও গ্যাস
লিকেজ হচ্ছে
কি না
বা জমছে
কি না,
তা বোঝা
যায় বলে
জানান ড.
হোসেন।
“বাসায় রান্না করার
জন্য ব্যবহৃত
প্রাকৃতিক ও
এলপিজি এই
দুই ধরনের
গ্যাসের মধ্যেই
পরিকল্পিতভাবে একটি
বিশেষ কেমিক্যাল
উপাদান যুক্ত
করা হয়,
যার কাজ
হচ্ছে গন্ধ
ছড়ানো,'' তিনি
বলেন।
যেহেতু গ্যাসের
কোন রঙ
নেই আর
তা চোখে
দেখা যায়
না, তাই
কোন কারণে
যদি পাইপলাইন
বা সিলিন্ডার
ছিদ্র হয়ে
গ্যাস ছড়াতে
থাকে, তা
সহজেই বুঝতে
পারার উদ্দেশ্যে
এই উপাদানটি
মিশিয়ে দেয়া
হয়।
দুর্গন্ধযুক্ত এই
উপাদানের গন্ধ
ছড়ানো ছাড়া
আর কোন
কাজ নেই।
এছাড়া গ্যাস
লিকেজ হলে
‘হিসহিস’ শব্দ
শোনা যায়।
এর মাধ্যমে
সহজেই বোঝা
যায় যে
লাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে।
রান্নাঘর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ
বাসাবাড়িতে গ্যাসের
লিকেজ হবার
সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ
স্থান রান্নাঘর।
আর তাই
কোনভাবেই রান্নাঘরের
জানালা, বিশেষ
করে রাতের
বেলা বন্ধ
করে রাখা
যাবে না।
জানালা পুরোপুরি
খোলা রাখা
না গেলেও
আংশিক খুলে
রাখতে হবে
যেন গ্যাস
ভেতরে জমতে
না পারে।
“কোন কারণে গ্যাস
লিকেজ হতেই
পারে। কিন্তু
সেটি যদি
বেরিয়ে যেতে
পারে তাহলে
সমস্যা নেই।
সমস্যা হয়
যখন গ্যাস
বের হতে
পারে না,”
বলেন ড.
হোসেন।
নির্দিষ্ট স্থানে
জমে থাকা
গ্যাস যখন
বের হতে
পারে না
তখন গ্যাস
ও অক্সিজেনের
মধ্যে বিক্রিয়া
হতে থাকে।
বিক্রিয়ার সঙ্গে
স্ফুলিঙ্গ যুক্ত
হয়ে উচ্চ
তাপ, উচ্চ
চাপ ও
উচ্চ গতিবেগের
কারণে বিস্ফোরণ
হয়, বলেন
ড. হোসেন।
ইলেকট্রিক সুইচ
অন-অফের
সময় যে
অনেক সময়
ছোট স্ফুলিঙ্গ
তৈরি হয়,
তা থেকেও
বিস্ফোরণ হতে
পারে।
এছাড়া সকালে
রান্নাঘরে গিয়ে
কখনোই সঙ্গে
সঙ্গে দেশলাই
বা বৈদ্যুতিক
সুইচ দেয়া
উচিৎ না।
কোনভাবে গ্যাস
জমে থাকলে
এতে করে
দুর্ঘটনা ঘটতে
পারে।
'বোমার সঙ্গে বসবাস'
উন্নত বিশ্বে
পানি, বিদ্যুৎ
ও গ্যাসের
জন্য আলাদা
ইউটিলিটি ডিপার্টমেন্ট
থাকে, যারা
সেবা দেয়ার
পাশাপাশি ভোক্তাদের
এগুলো ব্যবহারের
মৌলিক কিছু
টিপস ও
প্রশিক্ষণও দেয়।
কিন্তু বাংলাদেশে
তেমন কোন
ব্যবস্থা নেই
বলে জানান
ড. হোসেন।
''
তারপরও জনসাধারণ
যেটুকু জানেন,
তাও তারা
মানতে চান
না,'' তিনি
বলেন।
''একটি বোমার সঙ্গে
বসবাস করা
যেমন ঝুঁকিপূর্ণ,
তেমনি গ্যাস
লিকেজ নিয়ে
থাকা সমানভাবে
ঝুঁকিপূর্ণ,'' বলেন
তিনি।
তাই লিকেজ
বিষয়টিকে অত্যন্ত
গুরুত্বের সাথে
দেখা উচিত
বলে বিশেষজ্ঞরা
মনে করেন।
নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার
দায়িত্বশীল আচরণ,
জনবল ও
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির
ব্যবহার বৃদ্ধি
এবং সংস্থাগুলোর
মধ্যে সমন্বয়
করা গেলে
দুর্ঘটনা হ্রাস
করা সম্ভব
বলে ড.
হোসেন মনে
করেন।
করনীয় কী?
গ্যাস থেকে
বাসাবাড়ির নিরাপত্তা
নিশ্চিত করতে
চারটি সুনির্দিষ্ট
দিকে খেয়াল
রাখার সুপারিশ
করেন ড.
হোসেন:
গ্যাস ও
ইলেকট্রিক লাইন
এবং ফিটিংসের
নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ
করতে হবে।
বাসায় যে গ্যাস লাইন, ইলেকট্রিক লাইন, সিলিন্ডার, ফ্রিজ, এসি ইলেকট্রিক সার্কিট, ট্যাংক আছে, এগুলোতে কোন অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দ্রুত ঠিক করতে হবে।
বিদ্যুতের তার, সুইচ, লাইন, চুলা গুণগত মানসম্পন্ন হতে হবে, নিয়মিত তত্ত্বাবধান করতে হবে।
লিকেজ হচ্ছে বুঝতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে মেইন লাইন বন্ধ করে দিতে হবে ও সেই জায়গা থেকে সরে যেতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
জনসাধারণের নাগরিক
দায়িত্ব পালন
ও সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষের সচেতনতা
নিশ্চিত করা
গেলে এ
ধরনের দুর্ঘটনা
৯৯ শতাংশ
কমে যাবে
Post Your Comments